কামারুন-নাহার-মুকুল | শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট | 28 বার পঠিত
দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যিনি দেশের আর্থিক সেক্টরে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছিলেন, সততা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। যাঁর হাত ধরে দেশে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন শিল্প, ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তিনি হচ্ছেন ফিনিক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট শিল্পপতি দ্বীন মোহাম্মদ। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল ২৭ এপ্রিল। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত ও নানা অসুস্থতায় ভুগে ২০২১ সালের এই দিনে তিনি রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার (২৭ এপ্রিল) ফিনিক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
দ্বীন মোহাম্মদ ফিনিক্স গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ছিলেন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা। নিজের সক্ষমতা বিকাশ করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বৃহত্তম ফিনিক্স গ্রুপ। এভাবেই এই খ্যাতিমান ব্যবসায়ী সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদান রেখে গেছেন। দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনীতির বিকাশে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি অ্যাপোলো ইস্পাতের স্বত্তাধিকারীএবং আবাসন প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্রুপের অংশীদারও ছিলেন।
তিনি বিদেশ ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি শিল্পায়নের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের শিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। একে একে গড়ে তোলেন ফিনিক্স টেক্সটাইল মিলস, ইস্টার্ন ডাইং অ্যান্ড ক্যালেন্ডারিং ওয়ার্কস লিমিটেড, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড, ফিনিক্স ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড, ফিনিক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, ফিনিক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও রংধনু স্পিনিং মিলস লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এক পর্যায়ে ২০টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ফিনিক্স গ্রুপ।
তিনি কেবল ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। মানুষ মানুষের জন্য; জীবন জীবনের জন্য এই মানবিকবোধ থেকেই তিনি তৃণমূল পর্যায়ের দুস্থ ও অসহায় যারা স্বামী পরিত্যক্ত, বয়স্ক, সহায়-সম্বলহীনদের জন্য একটি সেবামূলক পূনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলেন বগুড়ার সাতশিমুলিয়া লাহাড়ীপাড়ায়।
ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি এক সময় লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাব ও রহমতগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। লালবাগ শাহী মসজিদ ও জামিয়া কুরআনিয়া আরব মাদ্রাসা পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন। ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের সম্মানিত আজীবন সদস্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শাহী মসজিদ এর সভাপতি ছিলেন।
শিল্প ও বাণিজ্য প্রসারে অসামান্য অবদান রাখায় তিনি অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালে তিনি মরহুম মাওলানা আকরাম খা গোল্ড মেডেল (শিল্পায়ন) এবং ১৯৯৯ সালে জগদীশ চন্দ্র স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছিলেন। এছাড়া তার ফিনিক্স ফিনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডকে আন্তর্জাতিক স্টার অ্যাওয়ার্ড কোয়ালিটিতে (আইএসএকিউ) ভূষিত করা হয়।
দ্বীন মোহাম্মদ ১৯৩৮ সালের ৩ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজ। তার শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়; পড়াশোনা করেছেন ঢাকার বর্তমান মুসলিম সরকারি হাইস্কুলে। বাবা মরহুম হাজী নুর মোহাম্মাদ পুরান ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা; ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। মাতা মরহুম আসমা খাতুন। দাদা-বাবা উভয়েই ব্যবসা করতেন। বাবার ব্যবসা ছিল আসাম ও গৌহাটিতে। ১৯৪৭ সালে প্রোপার্টি এক্সচেঞ্জ করে এদেশে আসেন এবং দেশ স্বাধীনের পর সকল ব্যবসা গুটিয়ে স্থায়ীভাবে চলে অসেন। জন্মের পর থেকেই দীন মোহাম্মদ ব্যবসায়িক পরিবেশে বড় হয়েছেন। আদমজী, লতিফ বাওয়ানী ও ইস্পাহানির মতো বনেদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার বাবার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। তাই তরুণ বয়স থেকেই তার মধ্যে বড় শিল্প গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রবল হয়। ১৯৬০ সালে তার ব্যবসায়িক কর্মজীবন শুরু হয়। ষাটের দশকে বাবার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ট্রেডিং ব্যবসা দিয়ে পথচলা শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ব্যবসায়ে সুনাম অর্জন করেন। তিনি ১৯৬২ সালে শিল্পে প্রবেশ করেন এবং সময়ের সাথে সাথে ব্যবসা ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশের শিল্পায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হন। তারপর ট্রেডিং থেকে তিনি মনোনিবেশ করেন শিল্পপণ্য উৎপাদনে। ঢাকার আদি ব্যবসায়ীদের অন্যতম হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন।
Posted ৯:২২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy